মাতৃত্ব, বিচ্ছেদ, ইনজুরি সব ছাপিয়ে শেষ ষোলোয় ওসাকা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট, ২০২৫ ১৩:৪৫

শেয়ার

মাতৃত্ব, বিচ্ছেদ, ইনজুরি সব ছাপিয়ে শেষ ষোলোয় ওসাকা
ইউএস ওপেনের শেষ ষোলোয় উঠে ওসাকার উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত।

ম্যাচ পয়েন্ট নিশ্চিত করার পর লম্বা এক শ্বাস নিলেন নাওমি ওসাকা। সেটি যে কেবল ক্লান্তির শ্বাস নয়, বরং স্বস্তিরও তা বোঝা যাচ্ছিল সহজেই। করতালিতে ভেসে উঠল ফ্ল্যাশিং মিডোজের লুই আর্মস্ট্রং স্টেডিয়াম। দর্শকেরা দাঁড়িয়ে জানালেন অভিনন্দন। অথচ এই করতালি চাইতে হয়েছিল তাঁকেই্‌ ম্যাচ শেষে সঞ্চালকের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে তিনি যখন বললেন, “কেউ কি ম্যাচ নিয়ে আমার জন্য উল্লাস করতে পারবেন?” মুহূর্তেই স্টেডিয়ামের পরিবেশ বদলে গেল।

 

টেনিসের মঞ্চে একসময় শীর্ষ আসনে ছিলেন ওসাকা। মাত্র চার বছরে চারটি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা (২০১৮, ২০২০ ইউএস ওপেন; ২০১৯, ২০২১ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন) জয় করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন আধুনিক টেনিসের নতুন রানি হিসেবে। কিন্তু মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, চোট আর ব্যক্তিগত জীবনের ওঠানামা তাঁকে যেন ধীরে ধীরে আড়ালে ঠেলে দিয়েছিল। ২০২১ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের সংকটের কারণে টেনিস থেকে সাময়িক বিরতি নেন। এরপর কন্যাসন্তান শাইকে জন্ম দেওয়ার পর আবারও কোর্টে ফেরার প্রস্তুতি নিলেও প্রতিযোগিতামূলক ছন্দে ফিরতে দেরি হচ্ছিল।

 

২০২৪ সালে প্রত্যাবর্তনের পরও চোটের কারণে বহু ম্যাচে তাঁকে ওয়াকওভার দিতে হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনেও ভাঙনের অভিজ্ঞতা পোহাতে হয়েছে, মার্কিন র‍্যাপার কোর্ডে আমারি ব্রুকসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার কাহিনি তখন শিরোনামে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, ওসাকার উজ্জ্বল অধ্যায় হয়তো অতীতই হয়ে গেছে।

 

কিন্তু ক্রীড়াজীবনের সৌন্দর্যই এখানে, ফিরে আসার গল্পগুলো বারবার নতুন করে অনুপ্রাণিত করে। ইউএস ওপেনের চলতি আসরেই ওসাকা যেন আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কেন তাঁকে নিয়ে এখনো আশা করার মতো জায়গা আছে। তৃতীয় রাউন্ডে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান দারিয়া কাসাতকিনাকে হারালেন ৬–০, ৪–৬, ৬–৩ গেমে। বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে ১৮ নম্বরে থাকা কাসাতকিনার বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা নিজের হাতে টেনে নিলেন ওসাকা।

 

প্রথম সেটে ৬–০ জয়ে তিনি যেন ফিরলেন সেই পুরোনো দিনের ধারায়, অপরাজেয় সার্ভ, আগ্রাসী রিটার্ন, আর চাপ সামলানোর ঠান্ডা মাথা। দ্বিতীয় সেটে ছন্দ হারালেও তৃতীয় সেটে আবারো দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ান। তাঁর সার্ভিস গেমগুলো দর্শকদের মনে করিয়ে দিল সেই খেলোয়াড়কে, যিনি একসময় সেরেনা উইলিয়ামসকেও হারিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছিলেন।

 

চতুর্থ রাউন্ডে উঠে আসাটাই এখন তাঁর জন্য বড় সাফল্য। নিজেই বলেছেন, “আমি চাই মানুষ আমার খেলা নিয়েই উল্লাস করুক।” হয়তো এই কথাতেই ফুটে উঠছে তাঁর বর্তমান অবস্থান, ট্রফি নয়, স্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় ফেরাই এখন তাঁর জয়।

 

আগামীকাল শেষ ষোলোতে ওসাকার প্রতিপক্ষ আরেক মার্কিন সুপারস্টার কোকো গফ। মাত্র ২০ বছর বয়সেই গ্র্যান্ড স্লামজয়ী এই তরুণী এখন র‍্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বরে। গফের দারুণ ফর্ম ওসাকার জন্য কড়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে ওসাকার কাছে এ লড়াইটা অন্যরকম আবেগের।

 

ছয় বছর আগে তাঁদের প্রথম মুখোমুখিতে ওসাকা বলেছিলেন, গফ একদিন টেনিসের গ্রেট হয়ে উঠবে। গতকাল সাংবাদিকেরা সেটি মনে করিয়ে দিলে তিনি হাসিমুখে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ, আমি কথাটা বলেছিলাম। তখন ওর বয়স ছিল মাত্র ১৫। আমি সঠিক ছিলাম।”

 

গফকে ছোট বোনের মতো মনে করেন ওসাকা। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ। “ওর সঙ্গে এখানে আবার খেলতে পারা দারুণ ব্যাপার হবে,” বললেন তিনি।