ইংল্যান্ড জাতীয় দলে প্রথম মুসলিম ফুটবলার জেড স্পেন্স

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৭:০১

আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৭:০২

শেয়ার

ইংল্যান্ড জাতীয় দলে প্রথম মুসলিম ফুটবলার জেড স্পেন্স
২৫ বছর বয়সী ইংলিশ ফুটবলার জেড স্পেন্স। ছবি: সংগৃহীত।

ইংল্যান্ডের নতুন অভিষেককারীর গল্পটি শুধু ফুটবল নয়, সাহস, ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাসের গল্প। জেড স্পেন্স সেই নাম, যিনি প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়ে তাক লাগিয়েছেন নিজেও। ২৫ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের জন্য এটি কেবল একটি সুযোগ নয়, বরং ইতিহাসের অংশ হওয়ার মুহূর্ত। কারণ তিনি হচ্ছেন ইংল্যান্ডের প্রথম প্রকাশ্য মুসলিম ফুটবলার।

 

লন্ডনে জন্মেছেন স্পেন্স, কিন্তু তার মায়ের রক্ত কেনিয়ান, বাবার জ্যামাইকান। বড় বোন কার্লা-সিমোন স্পেন্স হলেন পরিচিত অভিনেত্রী। এমন বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবারে বেড়ে ওঠা স্পেন্সের ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়েছিল ফুলহ্যামের একাডেমিতে। পেশাদার ফুটবল জীবনে পা রাখেন ২০১৮ সালে মিডলসব্রার হয়ে। তবে সহজ হয়নি পথ; দলটিতে নিয়মিত জায়গা পাননি। ২০২১ সালে ধারে পাঠানো হয় নটিংহ্যাম ফরেস্টে, যেখানে নিজের খেলার ছাপ রেখে প্রিমিয়ার লিগে দলের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

 

২০২২ সালে টটেনহ্যাম হটস্পার তাকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে দলে নেয়। কিন্তু বড় ক্লাবের মধ্যে জায়গা পেতে সহজ হয়নি। তখনকার কোচের মন্তব্য, “তাকে আমি দলে নেইনি, ক্লাবের সিদ্ধান্ত”। সে সময়ে স্পেন্সের জন্য কঠিন অধ্যায় ছিল। তবু আত্মবিশ্বাস হারাননি। “আমি একজন যোদ্ধা,” তিনি মনে মনে নিজেকে বলতেন।

 

ধীরে ধীরে সে নিজের পথ খুঁজে নেন। দুই বছরেরও বেশি সময় পর আবার টটেনহ্যামের প্রথম একাদশে নাম লিখান, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে। ফেব্রুয়ারিতে প্রিমিয়ার লিগে মাসের সেরা, প্রথম গোলের স্বাদ এবং ইউরোপা লিগ ফাইনালে বদলি হয়ে দলের শিরোপা জয় এ সব কিছুর মধ্য দিয়ে স্পেন্সের আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়।

 

জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার মুহূর্তে তার অনুভূতি এককথায় অনবর্ণনীয়। “আমি দেখেছি আমি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছি। এটি আমার জন্য আশীর্বাদ,” স্পেন্স বলেন। প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে চাপের কথা জানতে চাওয়া হলে হাসিমুখে উত্তর দেন, “হয়তো… হয়তো নয়। আমি সবসময় হাসিখুশি থাকাই জীবনের নীতি।”

 

ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে তিনি কখনো লুকোচুরি করেন না। সামাজিক মাধ্যমেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন, আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস ও কৃতজ্ঞতা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শক্তি জোগায়। কঠিন সময়ে আল্লাহর প্রতি ভরসা ও ভালো সময়ে কৃতজ্ঞতা দুটোই তার জীবনের মূলমন্ত্র।

 

স্পেন্সের গল্প শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এটি বহু প্রতিকূলতা, প্রত্যাখ্যান, ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কীভাবে একজন মানুষ নিজের পথ তৈরি করতে পারে, তা দেখায়। তার বার্তা সবার জন্য অনুপ্রেরণা, “যদি আমি পারি, তুমি পারবে। শুধু মুসলিম হিসেবে নয়, যে কোনো বিশ্বাসের অনুসারী হিসেবে। বিশ্বাস রাখো, চেষ্টা করো, তুমি পারবেই।”