রোনালদোকে এড়িয়ে ইতিহাস আল-হিলালের, সৌদি ফুটবলে বিজয়ের শুরু

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১৫:৩৬

আপডেট: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১৫:৩৭

শেয়ার

রোনালদোকে এড়িয়ে ইতিহাস আল-হিলালের, সৌদি ফুটবলে বিজয়ের শুরু

সিমোনে ইনজাগির নেতৃত্বে ক্লাব বিশ্বকাপে বাজিমাত করেছে সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল। ইউরোপের ধনকুবের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে চমকে দিয়েছে গোটা ফুটবল বিশ্বকে। এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে অন্যতম বড় কারণ তারা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে নেয়নি।


ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন ক্লাব বিশ্বকাপে খেলুন রোনালদো। এমনকি কিছু ক্লাব তার সঙ্গে যোগাযোগও করেছিল। কিন্তু রোনালদো নিজেই সিদ্ধান্ত নেন বিশ্রাম নেবেন এবং আবার আল-নাসরের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আল-হিলালও জানত, রোনালদোর মতো একজনকে তিন-চার সপ্তাহের জন্য দলে টানা হবে শুধুই এক মিডিয়া সার্কাস, যা দলকে মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিত।


আল-হিলালের সিইও এস্তেভে কালজাদা বলেন, "রোনালদো একজন কিংবদন্তি, কিন্তু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে তিন সপ্তাহের জন্য এনে নিজের দলে নেওয়া কখনোই যৌক্তিক হতো না। এতে শুধু দল নয়, সৌদি ফুটবল ব্র্যান্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতো।"


রোনালদো সৌদি প্রো লিগের গ্ল্যামার এনেছেন তা কেউ অস্বীকার করবে না। তার পথ ধরে এসেছে নেইমার, বেনজেমা, কন্তে, হেন্ডারসনের মতো তারকারা। কিন্তু আল-হিলাল ঠিক সময়ে বুঝেছে, নাম নয় দল গঠনের জন্য দরকার নিবেদিত, ফিট এবং ক্ষুধার্ত ফুটবলার। তাই তারা বেছে নেয় ইয়াসিন বুনু, কুলিবালি, সার্জেই মিলিনকোভিচ-সাভিচ, রুবেন নেভেস, মিত্রোভিচদের মতো খেলোয়াড়, যারা এখনও শীর্ষ পর্যায়ে নিজের সামর্থ্য দেখানোর জন্য মুখিয়ে।


যেখানে দল গুছাতে অন্য কোচদের মাস লাগে, সেখানে সিমোনে ইনজাগি মাত্র ১৪ দিনে গড়ে ফেলেন ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার দল। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১-১ ড্র করে শুরু, এরপর পচুকাকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে। সেখানেই আসে চমক, ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা!


কুলিবালি বলেন, “ইনজাগির কৌশল স্পষ্ট, ফুটবল বোঝেন ভালোভাবে। আমাদের সঙ্গে বেশি সময় না থাকলেও, ট্যাকটিকস, ভিডিও বিশ্লেষণ—সব কিছুতেই মনোযোগী। এটা এখন মাঠেও ফুটে উঠছে।”


ম্যানচেস্টার সিটির মতো দলকে হারিয়ে তারা শুধু ম্যাচ জেতেনি, ভেঙে দিয়েছে ইউরোপীয় দলের বিপক্ষে এশিয়ার টানা ২০ ম্যাচের জয়হীনতা। সেইসঙ্গে প্রমাণ করেছে—সৌদি ফুটবল শুধু অর্থ ঢালছে না, গঠন করছে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী দলও।


মিলিনকোভিচ-সাভিচের ভাষায়, “যারা বলত আমরা শুধু টাকার জন্য এখানে এসেছি, তাদের মুখে জবাব মিলেছে আজ। এই লিগ কেমন, তা আমরা মাঠেই প্রমাণ করেছি।”


ইনফান্তিনোর মতে, এটা ক্লাব ফুটবলের নতুন যুগের সূচনা। হয়তো এ কথায় অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস রয়েছে, কিন্তু সত্যি এই যে—আল-হিলালের মতো দলগুলো এখন শুধু খেলোয়াড় কেনাকাটায় নয়, মাঠের লড়াইটাও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।


রোনালদো সৌদি লিগকে পরিচিত করেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু আল-হিলাল দেখিয়ে দিল পরিচিতি আর সাফল্য এক নয়। যাদের হাতে দল আছে, তারাই চূড়ায় উঠতে পারে। এমনকি সেটা যদি হয় ‘এভারেস্টে অক্সিজেন ছাড়াই উঠার চেষ্টা’—তবুও।