শিরোনাম

উল্লসিত প্রোটিয়াদের ম্যাচ জয়ের নায়ক কেশব মহারাজ। ছবি: সংগৃহীত।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়াকে ৯৮ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় প্রোটিয়ারা। শুরুটা গড়ে দিয়েছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা, তবে ম্যাচের মূল নায়ক ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ। তিনি একঝটকায় তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। অস্ট্রেলিয়া দ্রুত রান তাড়ায় ভালো সূচনা করলেও হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং অর্ডার। মহারাজের দুর্দান্ত স্পেল তুলে ধরেছে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারের টেকনিক্যাল দুর্বলতা। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডে অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন প্রেনেলান সুব্রায়েন। প্রথম সাফল্য এনে দিয়ে তিনি ম্যাচে স্থিরতা আনেন। যদিও মিচেল মার্শ একাই লড়াই চালানোর চেষ্টা করেছিলেন, তবে লক্ষ্য তখন অনেক দূরের ছিল। প্রোটিয়াদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৯৭ রানের লক্ষ্য তাঁড়ায় ১৯৮ রানেই গুটিয়ে যায় অজিরা।
টস জিতে আগে প্রোটিয়াদের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ। দুই প্রোটিয়া ওপেনার এইডেন মার্করাম ও রায়ান রিকেলটন তোলেন ৯২ রান। এই জুটি ভাঙার দায়িত্ব নিয়ে বল হাতে নেমে পড়েন ট্রাভিস হেড। দলীয় ৯২ রানে ট্রাভিসের বলে রিকেলটন মিড অফে লাবুশানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় হন।
রিকেলটনের বিদায়ে ক্রিজে এসে মার্করামের সঙ্গে জুটি বাঁধেন ক্যাপ্টেন বাভুমা। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৮১ বলে ৯ চারে ৮২ রান করে ডোরশুইসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় হন মার্করাম। মার্করামের বিদায়ে ক্রিজে আসেন প্রোটিয়া ক্রিকেটের রেকর্ডবয় ম্যাথু ব্রিটজকে। ব্রিটজকে-বাভুমা জুটি থেকে আসে ৮৯ রান। ৫৬ বলে ৫৭ রান করে জাম্পার বলে ধরাশায়ী হন ব্রিটজকে।
এই জুটি ভাঙার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে রান ছিল ৪০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২৩। সহজেই সাড়ে তিনশো পেরোনো স্কোর তোলা সম্ভব ছিল। এমন সময় ব্যাট হাতে বোলারদের ঘুম হারাম করে দেওয়া ট্রাভিস হেড বল হাতে নেমে পড়েন প্রোটিয়াদের রানের চাকা টেনে ধরতে। একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরান ট্রিস্টান স্টাবস, নতুন সেনসেশন ডেভাল্ড ব্রেভিস আর কেশভ মহারাজকে। অভিষিক্ত প্রেনেলান সুব্রায়েনকেও ট্রাভিস হেড রানআউটের ফাঁদে ফেলেন। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৩ রান তোলে প্রোটিয়ারা। উইলান মুল্ডার ২৬ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকে হারিয়ে ২৯৬ রান তোলে বাভুমার দল। অজিদের হয়ে ট্রাভিস হেড ৯ ওভার বল করে ৫৭ রান খরচায় নিয়েছেন ৪টি উইকেট।
২৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ করেন দুই অজি ওপেনার। ৭ ওভারে আসে ৬০ রান। ট্রাভিস হেড কাটা পড়েন অভিষিক্ত সুব্রায়েনের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে। এরপর দৃশ্যপট পুরোপুরি উল্টে যায়। কেশব মহারাজের দুর্দান্ত এক স্পেলে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মার্কাস লাবুশান, ক্যামেরন গ্রিন, জস ইংলিস, এলেক্স ক্যারি ও এরন হার্ডি। ৫ উইকেটের তিনটি বোল্ড দুটি এলবিডব্লিউ। উইকেটের জন্য অন্য কারো দ্বারস্থ হতে হয়নি মহারাজের। একা হাতেই এক অঙ্কের রানে ফেরত পাঠিয়েছেন ৫ অজি ব্যাটারকে।
একপাশে ঠায় দাঁড়িয়ে মিচেল মার্শ। সপ্তম উইকেট জুটিতে ডোরশুইসের সঙ্গে গড়েন ৭১ রানের জুটি। দল যখন অস্ট্রেলিয়া, তখন যেকোনো কিছুই সম্ভব। কিন্তু বার্গারের বলে ডোরশুইসের পতন ঘটলে ম্যাচ জেতার অসম্ভব দায়িত্ব সামলানোর দায় পড়ে মিচল মার্শের হাতে। কিন্তু লক্ষ্য তখনো অনেক দূরে। এদিন আর কোনো ওয়ানম্যান শো দেখেনি কেয়ার্ন্সের মাঠ। সেই বার্গারের বলেই ৮৮ রান করে হার মানেন মিচেল মার্শ। মাত্র ৪০ ওভার ৫ বলেই ১৯৬ রানে থামে অজিদের ইনিংস। ৯৮ রানের জয় তুলে নিয়ে ওয়ানডে সিরিজের শুরুতেই আধিপত্য বিস্তার করল দক্ষিণ আফ্রিকা।
অজি ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বস নামানো কেশব মহারাজ ৩৩ রানে ১ মেডেন দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার বগলদাবা করেন। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারে সমস্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কেশব।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচে সহজ জয় পেয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন সিরিজের পরবর্তী লড়াই মাকাইতে, আর সেখানে নামার আগে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে।
আরও পড়ুন: