শিরোনাম

টেলরের প্রত্যাবর্তন যেন এক নতুন অভিষেক। ছবি: সংগৃহীত।
তিন বছর আগে জীবনের সব আশার আলো নিভে গিয়েছিল তাঁর জন্য। বিছানাই ছিল একমাত্র সঙ্গী, মনের গভীরে চলছিল যুদ্ধ। আজ তিনি মাঠে, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন যেন এক নতুন অভিষেকের অনুভূতি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৩৬তম টেস্ট খেলতে নেমেই যেন আবার জন্ম নিলেন ব্রেন্ডন টেলর।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বুলাওয়েও টেস্ট শুরুর আগে এক সাক্ষাৎকারে টেলর বলেন, “তিন বছর আগে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারতাম না। আজ আমি মাঠে, দেশের জার্সি গায়ে, যেটা আমি সবচেয়ে ভালোবাসি।”
টেলরের এই প্রত্যাবর্তনের পেছনে আছে দীর্ঘ আত্মসংঘাত, অ্যালকোহল ও মাদকাসক্তি, নিষেধাজ্ঞা আর আত্মশুদ্ধির এক অনন্য অধ্যায়। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসর নেওয়ার পর তাঁর জীবনে শুরু হয় অন্ধকার অধ্যায়। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব, কোকেইন আসক্তি, আইসিসির নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে যেন নিজের জীবনকেই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
২০২২ সালের শুরুতে টেলর নিজের ইচ্ছায় পুনর্বাসনে যান। ক্রিকেট থেকে দূরে থেকেই নিজের বাড়িতে ছোট পরিসরে কোচিং শুরু করেন। ফেরার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু নিশ্চিত কিছুই ছিল না। তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিভেমোর ম্যাকোনি তাঁকে আবার খেলার জন্য রাজি করান। টার্গেট ২০২৭ বিশ্বকাপ।
টেলর বলেন, “নিজের পরিবারের কাছে লজ্জিত ছিলাম। এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে কারো সাহায্য চাইতেও পারিনি। তবে পরে ওরা যেভাবে পাশে থেকেছে, তা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।”
তাঁর স্ত্রী, কেলি-অ্যান, প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি স্বামীর অবস্থা। টেলর বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, আমি নিজেই এই সমস্যা তৈরি করেছি, নিজেই ঠিক করব। ততদিনে মনে হয়েছিল স্বপ্নটা শেষ। মেনে নিয়েছিলাম।”
পুনর্বাসনের সময়ই তাঁর মানসিকতা বদলাতে শুরু করে। ফিরে পান জীবনের নতুন অর্থ। “সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আজকের এই মুহূর্ত আসত না,” বলেন টেলর।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সতীর্থদের কাছে কৃতজ্ঞ টেলর। বিশেষ কৃতজ্ঞ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও এমডির প্রতি, যাঁরা তাঁকে ফেরার সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
দীর্ঘ বিরতির পর ফেরার এই মুহূর্তটা তাঁর কাছে ছিল পরম প্রাপ্তি। “৩৬ নম্বর টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার মুহূর্তটা আমার কাছে দুনিয়ার সবকিছু,” আবেগে বলেন টেলর। “এমন ভালোবাসা পাওয়ার প্রত্যাশা করিনি। এটা আমার জন্য ছিল আত্মজিজ্ঞাসা ও কৃতজ্ঞতার এক মুহূর্ত।”
এখন তিনি আরও ফিট, ২০ কেজি ওজন কম, জীবনযাপন সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন। এই টেস্টে কিপিং করছেন না, তবে ব্যাটিং করছেন ওপেনিংয়ে, যেখানে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ চাপে।
প্রথম ইনিংসে জ্যাকব ডাফির শর্ট বলে অসাবধানতাবশত এজড হয়ে প্রথম চার মেরেই শুরুটা করেছেন। তবে তাঁর কথাতেই বোঝা যায়, “পারফরম্যান্স হলে ভাল, কিন্তু আমার জন্য এটা তার চেয়েও বড় কিছু। আমি শুধু খেলছি না, বেঁচে আছি। এটা একদম অভিষেকের মতো।”
আরও পড়ুন: