শিরোনাম

নাটকীয় জয়ে সিরিজে হার এড়াল ভারত। ছবি: সংগৃহীত।
শেষ দিনটা যেন লিখে রাখা ছিল থ্রিলারের জন্য। ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের দরকার ছিল মাত্র ৩৫ রান, হাতে ২ উইকেট। মোহাম্মদ সিরাজ তখন নিজেকে মেলে ধরলেন একেবারে শেষ দৃশ্যে এসে। আগের দিন হ্যারি ব্রুকের সহজ ক্যাচ ছেড়ে ছক্কা বানিয়ে ‘খলনায়ক’ হওয়ার তকমা কাঁধে নিয়ে খেলা শুরু করলেও, শেষদিন সিরাজ নিজেই হয়ে উঠলেন ভারতীয় নাটকের মহানায়ক। গাস অ্যাটকিনসনের স্টাম্প উড়িয়ে ইংল্যান্ডকে ৩৬৭ রানে থামিয়ে দিলেন সিরাজ। জয়টা এল মাত্র ৬ রানে, যা ভারতের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট ব্যবধানে জয়।
কিন্তু এই চূড়ান্ত রোমাঞ্চে ভরা শেষ দিনের আগে চার দিনেও জমজমাট ছিল লড়াই। প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়ালের জোড়া ফিফটিতে ভর করে ভারত তোলে ২৯৬ রান। জবাবে ইংল্যান্ডের ইনিংস ২৭৮ রানে থামে প্রথম ইনিংস শেষে লিড মাত্র ১৮। তবে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে স্কোর দাঁড় করায় ৩৫৫, যেখানে শ্রেয়াস আইয়ারের সেঞ্চুরি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টগুলোর একটি। ইংল্যান্ডের সামনে তখন ৩৭৪ রানের বিশাল লক্ষ্য।
চতুর্থ দিনের শেষভাগে ইংল্যান্ড হঠাৎই পা হড়কায়। কিন্তু পঞ্চম দিন সকালে লোয়ার অর্ডারে অ্যাটকিনসন ও ওভারটন মিলে ম্যাচটা আবার করে দেন জীবন্ত। অ্যাটকিনসনের সঙ্গী হন এক হাতে ব্যাটিংয়ে নামা ক্রিস ওকস, যিনি টানা ১৩ বল নন-স্ট্রাইক প্রান্তে থাকলেও শেষ দৃশ্যের পূর্বমুহূর্তে স্ট্রাইকে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওভারটনের উইকেট, টাংয়ের অল্পের জন্য বাঁচা, আকাশ দীপের হাত ঘুরে ছক্কা হওয়া সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ভরা ছিল শেষ এক ঘণ্টা।
অবশেষে মোহাম্মদ সিরাজ ৫ উইকেটের ঝলকে ম্যাচে নিয়ে এলেন সমাপ্তি। ৬ রানের এই জয় সিরিজে সমতা ফেরাল ৫ ম্যাচের অ্যাশেজ-সদৃশ সিরিজ শেষ হলো ২-২ এ, এবং ক্রিকেটভক্তরা পেলেন টেস্ট ক্রিকেটের আরেকটি অমর রোমাঞ্চ।
পরের বলেও উইকেট প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন সিরাজ। মাত্রই উইকেটে যাওয়া গাস অ্যাটকিনসনের ব্যাট ছুঁয়ে বলটি চলে যায় স্লিপ ফিল্ডার লোকেশ রাহুলের দিকে। বলটি পড়ে রাহুলের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের একটু সামনে।
মেঘলা আকাশের নিচে দুর্দান্ত বোলিং করা সিরাজ নিজের পরের ওভারেই পেয়ে যান পুরস্কার। এবার এলবিডব্লু ওভারটন। অনেকটা সময় নিয়েই আঙুল তুলেছিলেন আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ওভারটন, আম্পায়ার্স কলের কারণে টিকে যায় ধর্মসেনার সিদ্ধান্ত। ইংল্যান্ড হয়ে যায় ৩৫৪/৮। জয় থেকে তখন দলটি ২০ রান দূরে।
স্কোরে আর ১ রান যোগ হতেই উইকেট প্রায় পেয়েই গিয়েছিল ভারত। প্রসিধ কৃষ্ণার আবেদনে জশ টাংকে এলবিডব্লু দিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানি আম্পায়ার এহসান রাজা। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন টাং, বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্প মিস করত।
ওই বলে বেঁচে যাওয়া টাং ১২ বলে কোনো রান করতেও না পারলেও অ্যাটকিনসনকে দারুণ সঙ্গই দিয়েছিলেন। কিন্তু হলো না, ২৯ বলে ১৭ রান করা অ্যাটকনিসনকে নায়ক হতে দিলেন না সিরাজ।
এই নাটকীয় জয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ করল ভারত। শেষ টেস্টে জিতে সিরিজ বাঁচানোটা শুধুই পরিসংখ্যান নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তার এক দুর্দান্ত উদাহরণ। সিরিজের শুরুর দিকে পিছিয়ে থাকা ভারত শেষ দুই ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, বিশেষ করে ওভালের এই জয় এনে দিয়ে সিরাজরা দেখিয়ে দিলেন, টেস্ট ক্রিকেটে ফল আসতে সময় লাগে, কিন্তু একবার ছন্দে ফিরলে কিছুই অসম্ভব নয়। সিরিজ ড্র হলেও, শেষ ম্যাচের সাহসী পারফরম্যান্স ভারতের ভবিষ্যতের জন্য এক বড় বার্তা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ভারত: ২২৪ ও ৩৯৬।
ইংল্যান্ড: ২৪৭ ও ৮৫.১ ওভারে ৩৬৭ (ব্রুক ১১১, রুট ১০৫, ডাকেট ৫৪, পোপ ২৭, অ্যাটকিনসন ১৭; সিরাজ ৫/১০৪, কৃষ্ণা ৪/১২৬, দীপ ১/৮৫)।
ফল: ভারত ৬ রানে জয়ী। সিরিজ: ৫–ম্যাচ সিরিজ ১–১ ড্র। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ সিরাজ। ম্যান অব দ্য সিরিজ: হ্যারি ব্রুক ও শুবমান গিল।
আরও পড়ুন: