
জয়ের পর লর্ডসের বেলকোনিতে উল্লসিত দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক বাভুমা। ছবি: এএফপি
২৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটল লর্ডসে। অবশেষে ক্রিকেট বিশ্বে “চোকার” তকমা ঘুচিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফি জয়ের পর এটাই তাদের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা, আর সেটা এল সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটে—টেস্ট ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাক্রমশালী দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩-২৫ চক্রের চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করল প্রোটিয়ারা।
লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করা মোটেও সহজ কাজ নয়। ইতিহাসও সে কথাই বলে। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এমন জয়ের নজির আছে মাত্র ৫০ বার, তারও মধ্যে লর্ডসে মাত্র দুবার। এবার সেই বিরল তালিকায় নাম লেখাল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটি কী অবলীলায় জয় ছিনিয়ে নিল, সেটাই ক্রিকেট ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।
এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে ওপেনার এইডেন মার্করাম। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে খেললেন এক অনবদ্য ইনিংস—২০৭ বলের মোকাবেলায় ১৩৬ রান, ১৪টি চারে সাজানো এক অসাধারণ সেঞ্চুরি। ছয় মাস পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফিরে এমন পারফরম্যান্স যেন কিংবদন্তির গল্প। যদিও জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে মিডউইকেটে ট্রাভিস হেডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ একরকম নিশ্চিতই করে ফেলেছিলেন।
তার আগে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাও খেলেছেন এক অনন্য ইনিংস। হ্যামস্ট্রিং চোটে কুঁচকে যাওয়া শরীর নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ে খেলা চালিয়ে গেছেন। তৃতীয় উইকেটে মার্করামের সঙ্গে গড়েছেন ১৪৭ রানের দুর্দান্ত জুটি, যা মূলত গড়ে দিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। তাঁর ১৩৪ বলে ৬৬ রানের ইনিংসটি শুধু সংখ্যার দিক থেকে নয়, মানসিক দৃঢ়তারও প্রতীক।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ম্যাচে উত্তেজনার আভাস দিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য। বিশেষ করে ট্রিস্টান স্টাবসের উইকেটটি তুলে নেওয়ার পর। তবে তাদের বোলিং আক্রমণ আর নাটকীয় কিছু ঘটাতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের স্থিরতা, আত্মবিশ্বাস ও টেকনিক্যাল পরিপক্বতার কাছে হার মেনেছে প্যাট কামিন্সের দল।
এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জেতা নয়, বরং ইতিহাস ভাঙার, বদলানোর। সেই ১৯৯২ সালের ব্রিজটাউন টেস্টে চূড়ান্ত দিনে মাত্র ২৬ রানেই হার, সেখান থেকে এই ২০২৫-এর লর্ডস—এ এক বিজয়ের মহাকাব্য। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসজুড়ে ছিল বারবার সেমিফাইনালে ভেঙে পড়া, নকআউট ব্যর্থতা, বিশ্বমঞ্চে অপূর্ণতার দীর্ঘ ছায়া। আজ সব ছায়া দূর করে, কান্না ঝরিয়ে, বুক ঠুকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দল বলে উঠতে পারে, “আমরাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!”
আরও পড়ুন: