বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট ফুটবল প্রতিযোগিতা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট, ২০২৫ ১৮:৫২

শেয়ার

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট ফুটবল প্রতিযোগিতা
বেইজিংয়ে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হবে রোবট ফুটবল প্রতিযোগিতা, লড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট। ছবি: সংগৃহীত।

বেইজিংয়ে শুরু হতে যাচ্ছে এক অভূতপূর্ব ক্রীড়া আসর ২০২৫ ওয়ার্ল্ড হিউম্যানয়েড রোবট গেমস। আগামী ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট ন্যাশনাল স্পিড স্কেটিং ওভালে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে ৫ মহাদেশের ১৬ দেশের ২৮০টি দল অংশ নেবে। মোট ২৬টি ডিসিপ্লিনে ৫৩৮টি ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৫০০-র বেশি হিউম্যানয়েড রোবট।

 

তবে এবার সবচেয়ে বেশি আলো কাড়বে বিশ্বের প্রথম ৫ বনাম ৫ হিউম্যানয়েড রোবট ফুটবল ম্যাচ। খেলোয়াড়দের প্রতিটি পদক্ষেপ, পাস, শট কিংবা কৌশল নির্ধারণ হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যালগরিদম দিয়ে কোনো মানব হস্তক্ষেপ ছাড়াই। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ম্যাচ কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং স্বয়ংক্রিয় দলীয় সিদ্ধান্ত ও সহযোগী বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির এক বড় পরীক্ষা হবে।

 

এই প্রথম হিউম্যানয়েড ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে কোনো অলিম্পিক ভেন্যুতে, যা প্রযুক্তি ও ক্রীড়ার মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠবে। মোট দশটি রোবট একই মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যা দর্শকদের জন্য হবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

 

বিশ্ব হিউম্যানয়েড রোবট গেমসে এবার প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেফেস্টাস টিম। উন্নত প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সজ্জিত এই রোবটগুলোতে রয়েছে অত্যাধুনিক ‘ভিজ্যুয়াল সেন্সর’, যা ফুটবল শনাক্ত করার পাশাপাশি সঠিক সতীর্থকে পাস দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। খেলায় পড়ে গেলে বেশিরভাগ সময় তারা নিজেরাই উঠে দাঁড়াতে পারে, যদিও তা সবসময় নিশ্চিত নয়।

 

টিমের সদস্যদের মতে, নিজ দেশে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে তারা ভীষণ উচ্ছ্বসিত এবং জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামছেন। এক সদস্য জানান, “বিশ্বমানের এ ধরনের আসরে আমরা প্রথমবার অংশ নিচ্ছি। বিভিন্ন দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হতে আমরা প্রস্তুত ও রোমাঞ্চিত। সেন্সরের মাধ্যমে রোবটগুলোকে শেখানো হয়েছে কীভাবে ড্রিবল করতে হবে, কীভাবে বল শট করতে হবে।”

 

তাদের আশা, এই প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্সের মাধ্যমে কেবল প্রযুক্তিগত সক্ষমতাই নয়, বরং রোবট ফুটবলের সম্ভাবনাও বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

 

২৮০ দলের মধ্যে ১৯২টি বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক এবং ৮৮টি কর্পোরেট দল, যার মধ্যে রয়েছে চীনের শীর্ষ হিউম্যানয়েড রোবট নির্মাতারা। আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ মোট ১৫টি দেশের দল থাকবে। ১২৭টি ব্র্যান্ডের রোবট প্রদর্শিত হবে এই আসরে।

 

ফুটবলের বাইরেও গেমসে থাকছে নানা আকর্ষণ। “১০০ মিটার ড্যাশ” ইভেন্টে দ্রুততম রোবটের খেতাবের জন্য লড়বে ৯০ দল। এছাড়া গত এপ্রিলে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বের প্রথম হিউম্যানয়েড রোবট হাফ-ম্যারাথনের শীর্ষ ছয় রানারও বিশেষ প্রদর্শনীতে অংশ নেবে।

 

অন্যদিকে, ফ্রিস্টাইল কমব্যাট ইভেন্টে অংশ নেবে ছয়জন অলিম্পিক পদকজয়ীর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ দুটি দল। এর মধ্যে রয়েছেন জুডো চ্যাম্পিয়ন ইয়াং শিউলি, ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতারে রুপাজয়ী ঝাং লিন এবং সিঙ্ক্রোনাইজড সাঁতারে রুপাজয়ী চ্যাং সি। তাদের উপস্থিতি প্রতিযোগিতায় যোগ করবে বাড়তি উত্তেজনা।

 

গেমসের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে ন্যাশনাল স্পিড স্কেটিং ওভালে উদ্বোধন করা হয়েছে “বেইজিং হিউম্যানয়েড রোবট ট্রেনিং বেস”। পাশাপাশি, বিশ্বের প্রথম পেশাদার রোবট ফুটবল স্টেডিয়াম “পান্ডা আই” ট্রেনিং বেসও প্রস্তুত হয়েছে। আধুনিক ইটিএফই মেমব্রেন কাঠামোর এই গম্বুজাকৃতি ভেন্যুতে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ল্যাব মানে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, একই সঙ্গে প্রবেশ করবে প্রাকৃতিক আলো ও চাঁদের আলো।

 

ভেন্যুর দক্ষিণ-পশ্চিমে স্থাপিত “রোবোল্যান্ড রোবট ক্যাম্প” মানব-রোবট সংহতকরণের দর্শনে নকশা করা হয়েছে। আয়োজকরা আশা করছেন, এটি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রোবট শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে, যেখানে গবেষণা, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিনিময় ঘটবে নিয়মিতভাবে।

 

আগামী ১৪ আগস্ট থেকে বেইজিংয়ে পর্দা উঠছে বিশ্ব হিউম্যানয়েড রোবট গেমসের। তিনটি বিভাগে মোট ১৮টি ইভেন্টে অনুষ্ঠিত হবে প্রতিযোগিতা। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শনের লক্ষ্য নিয়ে অংশ নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, জার্মানি, পর্তুগালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০টি দল।