
ইন্টার মায়ামির লিওনেল মেসি গোলের উদ্দেশে শট নিচ্ছেন। ছবি: জন রাউক্স/এপি
মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত হলো ফিফার নতুন কাঠামোয় গড়া ক্লাব বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। আল-আহলি ও ইন্টার মিয়ামির মধ্যকার এই উদ্বোধনী খেলাটি ফুটবলীয় উত্তাপের চেয়ে ছিল অনেক বেশি এক জমকালো বাণিজ্যিক আয়োজন। লিওনেল মেসির উপস্থিতি দর্শকদের মনে খানিকটা ‘ম্যাজিক’-এর আমেজ জাগালেও পুরো ম্যাচটি যেন ছিল এক টানটান বাণিজ্যিক ‘শো’-এর মধ্যে ফুটবলের খণ্ডচিত্র মাত্র।
ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মঞ্চে পারফর্ম করেন জনপ্রিয় ডিজে ফ্রেঞ্চ মন্টানা ও সোয়ে লি। তাঁদের সঙ্গে ছিল শিল্পী ভিকিনা ও রিখেলিওর গানে-নাচে মেতেছে পূর্ণ দর্শক। পুরো আয়োজনটি যেন পপ-সংস্কৃতির এক বৈশ্বিক কার্নিভাল, যেখানে ফুটবল ছিল অনেকটাই পাশে সরানো এক উপাদান।
মাঠের খেলায় আল-আহলি শুরুতে আধিপত্য বিস্তার করলেও কাজে লাগাতে পারেনি সুযোগ। প্রথমার্ধেই মিস করে এক পেনাল্টি। অন্যদিকে ইন্টার মিয়ামির গোলরক্ষক ওস্কার উস্তারির দুর্দান্ত সেভ গুলো তাঁকে ম্যাচসেরা করে তোলে। দ্বিতীয়ার্ধে একটু চাঙ্গা হন লিওনেল মেসি। কিছু সুচতুর ফ্রি-কিক ও পোস্টে লেগে ফিরে আসা এক শট মিলিয়ে কিছুটা পুরনো জাদুর ঝলক পাওয়া গেলেও তা ছিল সামান্যই।
শেষ পর্যন্ত ৬০,৯২৭ দর্শকের সামনে ম্যাচটি ০-০ গোলে শেষ হয়। গোলশূন্য ফলাফলে ফুটবলীয় সন্তুষ্টির তেমন কিছু ছিল না। বরং গোটা আয়োজনের ফোকাস যেন ছিল এক বৃহৎ কৌশলগত প্রচারাভিযান - ফিফার নতুন বিশ্ববাজার দখলের পদক্ষেপ।
এই ম্যাচটি স্পষ্ট করে দিয়েছে, বর্তমান ক্লাব বিশ্বকাপ মূলত এক বাজারজাতকরণ প্রকল্প। যেখানে ফুটবলের আবেগ-ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে বিশ্বমঞ্চে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। মেসির মতো কিংবদন্তিকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে এক প্রভাববিস্তারী চিত্রনাট্য - যা দর্শকদের আবেগকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
শেষ পর্যন্ত যারা লাভবান হয়েছেন, তারা হলেন মাঠে উপস্থিত দর্শকরা। মিয়ামি শহরের উৎসবমুখর পরিবেশ, আল-আহলির আক্রমণাত্মক শুরু, এবং উস্তারির দৃঢ়তায় রাতটি হয়ে ওঠে এক দৃষ্টিনন্দন আয়োজন। তবে ফুটবলপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন থেকেই যায় - এই ক্লাব বিশ্বকাপ কি আদৌ খেলার জন্য, নাকি শুধুই এক প্যাকেটজাত পণ্য?
আরও পড়ুন: