ফুটবলের বিশ্ব আসরে এবার ক্লাব বিশ্বকাপ, ফিফার নতুন রূপে ৩২ দলের মহারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪ জুন, ২০২৫ ০৮:৩০

শেয়ার

ফুটবলের বিশ্ব আসরে এবার ক্লাব বিশ্বকাপ, ফিফার নতুন রূপে ৩২ দলের মহারণ
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ট্রফি

অনেকের কাছে ফিফা বিশ্বকাপ মানেই জাতীয় দলগুলোর মহাযুদ্ধ, কিন্তু এবার জুন–জুলাইয়ে ফুটবলপ্রেমীদের সামনে থাকছে আরেক বিশ্বকাপ - তবে সেটি ক্লাব ফুটবলের। ‘ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ’ নামে পরিচিত এই প্রতিযোগিতা ২০০০ সাল থেকেই অনুষ্ঠিত হলেও এতদিন এর কলেবর ছিল ছোট, ছয় বা সাতটি দল নিয়ে ১০ দিনের ছোট্ট টুর্নামেন্ট। কিন্তু এবার ফিফা এটিকে দিতে যাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ বিশ্বকাপের রূপ। প্রথমবারের মতো ৩২টি ক্লাব অংশ নিচ্ছে, আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে হবে মোট ৬৩টি ম্যাচ, চলবে এক মাসব্যাপী।


এই টুর্নামেন্টে ইউরোপের ১২টি, দক্ষিণ আমেরিকার ৬টি, আফ্রিকা, এশিয়া ও কনক্যাকাফ থেকে ৪টি করে, ওশেনিয়া থেকে একটি এবং আয়োজক দেশের দুটি দল অংশ নিচ্ছে। ৮টি গ্রুপে বিভক্ত ৩২টি দল থেকে প্রতি গ্রুপের সেরা দুইটি যাবে শেষ ষোলোয়, তারপর থেকে শুরু হবে নকআউট পর্ব। ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করছে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি, পিএসজি, ইন্টার মিলানসহ বড় ক্লাবগুলো। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আছে রিভার প্লেট, বোকা জুনিয়র্স, ফ্লুমিনেজ, বোতাফোগোসহ লাতিন জায়ান্টরা। এশিয়ার হয়ে খেলছে আল হিলাল, উরাওয়া, আল আইন ও উলসান হিউনদাই। আফ্রিকার হয়ে অংশ নিচ্ছে আল–আহলি, ওয়াইদাদ, এসপেরানস ও মামেলোদি সানডাউনস। যুক্তরাষ্ট্র থেকে খেলছে ইন্টার মায়ামি ও লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি। একমাত্র ওশেনিয়া দল অকল্যান্ড সিটি অংশ নিচ্ছে নিউজিল্যান্ড থেকে।


সবচেয়ে বেশি ১৪২ জন ফুটবলার এসেছেন ব্রাজিল থেকে, এরপর আছেন ১০০ জন আর্জেন্টাইন। জাতীয় দলের বিশ্বকাপের তুলনায় এই প্রতিযোগিতায় প্রাইজমানির অঙ্ক আরও বড়, ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। অংশগ্রহণ ফি থেকে শুরু করে পারফরম্যান্স বোনাস, নকআউট অগ্রগতি ও চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার হিসেবে দলগুলো পাচ্ছে বিপুল অর্থ। যেমন শুধু অংশগ্রহণের জন্য ওশেনিয়ার অকল্যান্ড সিটি পাচ্ছে ৩৫.৮০ লাখ ডলার, আফ্রিকা ও এশিয়ার ক্লাবগুলো ৯৫.৫০ লাখ ডলার করে, দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো পাচ্ছে ১ কোটি ৫২.১০ লাখ, আর ইউরোপের দলগুলো পাবে সর্বোচ্চ ৩ কোটি ৮১.৯০ লাখ ডলার পর্যন্ত। ফাইনালে জয়ী দল পাবে ৪ কোটি ডলার।


এই টুর্নামেন্টে থাকছে কিছু নতুনত্বও। প্রথমবারের মতো রেফারির শরীরে থাকবে বডি ক্যামেরা, যা দিয়ে ম্যাচের নির্দিষ্ট মুহূর্তের সম্প্রচারে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। যদিও বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর ফুটেজ দেখানো হবে না। গোলকিপারদের বল ধরে রাখার সময়সীমাও বদলে গেছে, এখন থেকে আট সেকেন্ডের মধ্যে বল ছাড়তে হবে, নইলে প্রতিপক্ষ পাবে কর্নার কিক। আর ম্যাচ শুরুর কয়েন টসের ফুটেজও থাকবে লাইভ সম্প্রচারে।


তবে এই টুর্নামেন্ট ঘিরে বিতর্কও রয়েছে। ফিফপ্রোসহ অনেক ফুটবল সংগঠন মনে করছে, জাতীয় দলের টুর্নামেন্ট, ক্লাব মৌসুম এবং এখন ক্লাব বিশ্বকাপ। সব মিলিয়ে খেলোয়াড়দের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। বছরের সব মাসজুড়েই ফুটবলারদের ব্যস্ততার কারণে বিশ্রামের সুযোগ কমে যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের পারফরম্যান্স ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ইউরো ও কোপা আমেরিকার পরপরই এই টুর্নামেন্টে খেলা অনেকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।


যদিও ইউরোপের ক্লাবগুলো স্বাভাবিকভাবেই ফেবারিট, তবু দক্ষিণ আমেরিকার বোতাফোগো কিংবা রিভার প্লেটের মতো দলগুলোও চমক দিতে পারে। প্রথম ম্যাচ ১৪ জুন ইন্টার মায়ামি ও আল–আহলির মধ্যে, আর ১৩ জুলাই নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল, যেটি ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যুও। বড় তারকাদের অনুপস্থিতি কিছুটা হতাশাজনক হলেও নতুন নিয়ম, বড় পরিসর আর বিপুল অর্থ পুরস্কারের কারণে এবারের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এক নতুন মাত্রার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা।

আরও পড়ুন: