ব্যর্থ অ-২৩ দল, প্রশ্নের মুখে কোচিং স্টাফ-কাবরেরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৮:৩৯

আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৮:৫১

শেয়ার

ব্যর্থ অ-২৩ দল, প্রশ্নের মুখে কোচিং স্টাফ-কাবরেরা
বাংলাদেশ অনূর্ধ-২৩ ফুটবল দল। ছবি: সংগৃহীত।

এএফসি অনূর্ধ্ব–২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২৩ দল। অথচ টুর্নামেন্টকে ঘিরে এতটা বিস্তৃত প্রস্তুতির নজির দেশের ফুটবলে আগে কখনো দেখা যায়নি। বাহরাইনে দুই সপ্তাহের ক্যাম্প, দুটি প্রীতি ম্যাচসহ পুরো এক মাসের অনুশীলন শেষে ভিয়েতনামে গিয়েছিল দল। খেলোয়াড়দের মান নিয়েও আশাবাদ ছিল যথেষ্ট। মোরসালিন-জায়ানদের এই স্কোয়াডকে অনেকে আগের যেকোনো অনূর্ধ্ব–২৩ দলের চেয়ে এগিয়ে মনে করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে মাঠে নেমে ভরাডুবিই হলো। ফলে দেশের ফুটবল অঙ্গনে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।

 

ভিয়েতনামে দলের পারফরম্যান্স মাঠে বসেই দেখেছেন বাফুফের পাঁচ নির্বাহী সদস্য। তাদের সবার মনেই হতাশা। বিশেষ করে কোচের খেলোয়াড় পরিবর্তন নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ফুটবলার গোলাম গাউস। তার মতে, সঠিক সময়ে সঠিক খেলোয়াড় পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলার গতিপথ পাল্টে দিতে হয় কোচের আসল দক্ষতা সেখানেই। অথচ মোরসালিনের মতো অধিনায়ক ও আক্রমণভাগের প্রধান ভরসাকেও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তুলে নেওয়া হয়েছে।

 

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলিও দায় চাপালেন কোচিং স্টাফ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ওপর। তিনি মনে করেন, ফেডারেশন যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও মাঠে দলের খেলার মধ্যে কোনো পরিকল্পনা বা সমন্বয়ের ছাপ ছিল না। সিনিয়র ফুটবলারদেরও প্রত্যাশিত অবদান ছিল না। দুই ম্যাচে একমাত্র গোলের মতো আক্রমণ এসেছিল মোরসালিনের দূরপাল্লার শট থেকে।

 

টানা দুই হারে ছিটকে যাওয়ার পর কোচ হাসান আল মামুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই টুর্নামেন্ট ফুটবলারদের জন্য শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হবে। তবে তার মন্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়েছেন ফেডারেশনের কর্তারাও। তাদের যুক্তি, অনূর্ধ্ব–২৩ আসলে প্রায় জাতীয় দলই, শেখার জায়গা নয়। দায়িত্ব এড়াতেই নাকি এভাবে মন্তব্য করেছেন তিনি।

 

আনুষ্ঠানিকভাবে এই দলের হেড কোচ ছিলেন সাইফুল বারী টিটু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুরো দল পরিচালিত হয়েছে জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার তত্ত্বাবধানে। তার সহকারী হিসেবে ছিলেন হাসান আল মামুন, যিনি আসলে মাঠে একাদশ সাজানোর কাজ করেছেন। তবে অনেকের দাবি, কাবরেরার নির্দেশেই সব সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যর্থতার দায় তাই তাকেই নিতে হবে বলে মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক এমিলি। তার ভাষায়, “মামুন ভাই সামনের সারিতে থাকলেও পেছনে ছিলেন কাবরেরা। কাবরেরার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে, সেক্ষেত্রে তার সহকারীর কাছ থেকে বাড়তি কিছু আশা করা অবাস্তব।”

 

এমনকি দলের সঙ্গেই থাকা আরও অনেকে মনে করেন, কাবরেরার দূর থেকে হস্তক্ষেপই সমস্যার বড় কারণ। স্পেন, ঢাকা কিংবা নেপাল থেকে দেওয়া নির্দেশনা মাঠের বাস্তবায়নে অস্পষ্টতা তৈরি করেছে।

 

হাসান আল মামুন নিজে সাবেক জাতীয় অধিনায়ক হলেও কোচ হিসেবে তার অভিজ্ঞতা সীমিত। শেখ জামালের সহকারী কোচ থেকে ফেডারেশনে কাজের সুযোগ পেলেও ক্লাব পর্যায়ে হেড কোচের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে অনূর্ধ্ব–২৩ দল সামলানো তার জন্যও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। মাঠের পারফরম্যান্সই সেই সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করেছে।

 

সাবেক ফুটবলার ও কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু অবশ্য দায় দেখছেন আরও গভীরে। তার মতে, মূল সমস্যা সিস্টেমে। তিনি বলেন, “আমাদের কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া আন্তর্জাতিক ফুটবলে সাফল্য আসবে না। শুধু সার্টিফিকেটধারী নয়, প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন কোচ তৈরি করতে হবে। সেই কোচরাই যোগ্য ফুটবলার গড়ে তুলবে। পাশাপাশি ক্লাব ও ফেডারেশনের সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।”

 

অর্থাৎ প্রস্তুতি যতই জোরালো হোক না কেন, কোচিং পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২৩ দলের এবারের ব্যর্থতা এড়ানো যায়নি।