বাফুফে’র গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন, তিন মেয়াদের বেশি নয়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ১৪:৪০

শেয়ার

বাফুফে’র গঠনতন্ত্রে বড় পরিবর্তন, তিন মেয়াদের বেশি নয়
বাফুফে ভবন। ছবি: সংগৃহীত।

গেল বছরের ২৬ অক্টোবর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাবিথ আউয়াল বাফুফে গঠনতন্ত্র সংস্কারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। ৯ নভেম্বর প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গঠনতন্ত্র সংস্কারের জন্য ড. মোহাম্মদ জাকারিয়াকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের তিন মাস মেয়াদের কমিটি গঠন করা হয়। কয়েক মাসের কাজ শেষে সেই কমিটি তৈরি করেছে খসড়া গঠনতন্ত্র, যা গত শনিবার (২৩ আগস্ট) নির্বাহী কমিটির সভায় পেশ করা হয়।

 

মেয়াদ ও পদে সীমাবদ্ধতা

খসড়া গঠনতন্ত্রে মূল পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হলো নির্বাহী কমিটির পদে পুনঃনির্বাচনের সীমা। বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকলেও খসড়ায় ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিন বারের জন্য নির্বাহী কমিটির কোনো পদে থাকতে পারবেন। এটি টানা হোক বা বিরতিসহ, সব পদে প্রযোজ্য। ফিফার নিয়মে প্রেসিডেন্ট পদে কিছু শিথিলতা থাকলেও বাফুফের খসড়ায় কোনো বিশেষ সুবিধা রাখা হয়নি।

 

বর্তমান নির্বাহী কমিটির মধ্যে সত্যজিৎ দাশ রুপু সর্বোচ্চ পাঁচ মেয়াদে ছিলেন, আমিরুল ইসলাম বাবু ও বিজন বড়ুয়া চার, আর তাবিথ আউয়াল, ইকবাল হোসেন, মাহফুজা আক্তার কিরণ, জাকির হোসেন চৌধুরী তিন মেয়াদ পার করেছেন। নতুন গঠনতন্ত্র পাশ হলে এই সদস্যরা পুনরায় নির্বাচন করতে পারবেন। ট্রানজিশনাল ধারা অনুযায়ী, নতুন গঠনতন্ত্র পাসের পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়াদ গণনা শুরু হবে।

 

নির্বাচন প্রক্রিয়া ও বয়স সীমা

নির্বাহী পদে নির্বাচন এখন আরও কঠোর হয়েছে। সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য কাস্টিং ভোটের ৫০% পাওয়া বাধ্যতামূলক। উদাহরণস্বরূপ, যদি তিন প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেন এবং কেউ প্রথম রাউন্ডে ৫০% ভোট না পান, তবে সর্বনিম্ন ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী বাদ দিয়ে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে।

 

বর্তমান গঠনতন্ত্রে ২৫ বছরের কম ও ৭২ বছরের বেশি বয়সে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্যতা ছিল। নতুন খসড়ায় বয়স সীমা নেই, ফলে যেকোনো বয়সের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন।

 

নির্বাহী কমিটির কাঠামো ও নারী অংশগ্রহণ

নির্বাহী কমিটির সংখ্যা রাখা হয়েছে ২১ জন। এতে থাকবে সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, চার সহ-সভাপতি এবং ১৫ কার্যনির্বাহী সদস্য। ১৫ কার্যনির্বাহীর মধ্যে কমপক্ষে দুইজন নারী সদস্য থাকতে হবে। প্রথম নির্বাচনে নারীর ক্ষেত্রে শিথিলতা থাকবে।

 

নির্বাহী কমিটির সভা বছরে তিন থেকে চারবার করার প্রস্তাব আছে। এছাড়া ৫০% শূন্য পদ পূরণের জন্য উপ নির্বাচন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

 

স্বতন্ত্র কমিটি ও দায়িত্বের স্বচ্ছতা

ডিসিপ্লিনারী, আপিল, কমপ্লায়েন্স ও নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং কংগ্রেসের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য, ক্লাব, জেলা বা ফেডারেশনের আত্মীয় ও ব্যবসায়িক অংশীদার এই কমিটিতে থাকতে পারবেন না।

 

ভোটাধিকার ও ফুটবল সংশ্লিষ্টতা

নতুন খসড়ায় জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটাধিকার নিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার শীর্ষ তিন দলকে ভোটাধিকার প্রদান করা হবে। পাইওনিয়ার লিগকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও ভোটাধিকার নেই। এছাড়া সদস্য সংস্থার বাৎসরিক চাঁদা ১ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে।

 

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারা: সর্বোচ্চ তিনবার নির্বাহী কমিটিতে থাকা যাবে, নির্বাহী কমিটির আকার ২১, কমপক্ষে ২ নারী, সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে কাস্টিং ভোটের ৫০% প্রয়োজন, বয়স সীমা নেই, ডিসিপ্লিনারী-আপিল-কমপ্লায়েন্স ও নির্বাচন কমিশন কংগ্রেসে নির্বাচিত, ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে প্রার্থীকে, ১৮টি স্ট্যান্ডিং কমিটি রাখা হয়েছে, গ্রাউন্ডস কমিটি অন্তর্ভুক্ত নয়, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় শীর্ষ তিন দলের ভোটাধিকার প্রদান।

 

নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এক মাসের মধ্যে খসড়া নিয়ে মতামত দেবেন। প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজনের পর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সাধারণ পরিষদে উঠবে। এজিএমের মাধ্যমে নতুন গঠনতন্ত্র কার্যকর হবে।