স্বীকারোক্তি, স্বচ্ছতা ও স্বপ্ন: তাবিথের মুখোমুখি বাফুফের ৮ মাসের হিসাব

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪ জুন, ২০২৫ ০৯:২৫

আপডেট: ১৫ জুন, ২০২৫ ০০:৫১

শেয়ার

স্বীকারোক্তি, স্বচ্ছতা ও স্বপ্ন: তাবিথের মুখোমুখি বাফুফের ৮ মাসের হিসাব
সংবাদ সম্মেলনে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর আট মাস কেটে গেছে। এই সময়ে কী পাওয়া, কোথায় ব্যর্থতা—সবই অকপটে তুলে ধরলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ‘মিট দ্য প্রেস’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে শনিবার রাজধানীর এক ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হলেন তিনি। যেখানে নিজের নেতৃত্বের সফলতা যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি স্বীকার করেছেন সীমাবদ্ধতা, দায়ও নিয়েছেন ব্যর্থতার।


তাবিথ আউয়াল বলেন, “আমি মনে করি, জবাবদিহিতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ছয় মাস পরপর এমন আয়োজন হলে ভালো হয়। বাজেটে খেলাধুলার জন্য যে ২ হাজার কোটি বরাদ্দ থাকে, তার বেশির ভাগই চলে যায় মেইন্টেনেন্স ও বেতনভাতা বাবদ। নতুন অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য বাজেট প্রয়োজন। পুরোনো কাঠামো ভেঙে নতুন করে তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।”


তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ক্রীড়া সামগ্রীর ওপর ৩৬ শতাংশ কর কমানোর জন্য। উদাহরণ টেনে বলেন, ভারতে কর মাত্র ১২ শতাংশ।


মাঠ ও লিগের মান নিয়ে স্বীকারোক্তি

 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগসহ দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় সমস্যা—মাঠের নিম্নমান। এ বিষয়ে প্রশ্ন এড়াননি তাবিথ। বরং স্পষ্ট স্বীকারোক্তি, “জাতীয় স্টেডিয়াম ফেরত পেলেও আমরা যেসব মাঠে লিগ বা চর্চা চালাচ্ছি, তাদের মান সত্যিই কম। আমরা এটা স্বীকার করি। আগামী ছয় মাসে এই জায়গায় দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি।”


বয়সভিত্তিক ফুটবলে অগ্রগতি, জেলাভিত্তিক আয়োজন থমকে

 

সারা দেশে অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল, পাহাড়, চর, সৈকতজুড়ে বয়সভিত্তিক আয়োজনের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি। তবে জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতা চালু করতে না পারার ব্যর্থতা কাঁধে নিয়েছেন তাবিথ। বলেন, “আমরা বয়সভিত্তিক দিয়ে শুরু করেছি। এখন ধাপে ধাপে জেলা ও আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতা শুরু করব।”


জাতীয় দলের উন্নতির জন্য প্রীতি ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের প্রয়োজন

 

তাবিথ আউয়াল স্পষ্ট করেন, জাতীয় দলের প্রস্তুতির জন্য ভবিষ্যতে শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ আয়োজনের উদ্যোগ থাকবে। জামাল-হামজারা যেখানে ভুটানের মতো দলকে পেয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝে উঠতে পারেননি, সেখানে নারী দল জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলেছে এবং আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

 

তাবিথ আশাবাদী, সামনের আড়াই বছরে মেয়েদের দলকে আরও শক্তিশালী করা যাবে। একই সঙ্গে জাতীয় দলের জার্সি, ইকুইপমেন্ট, পরিবেশ—সবকিছুতে উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আশ্বাস দেন। বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশ দল মাঠে নামলে যেন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে।”


এই ‘মিট দ্য প্রেস’ আয়োজন ছিল বাফুফের এক নতুন ধরনের জবাবদিহিমূলক প্রয়াস। যেখানে স্বচ্ছতা, সাহসিকতা ও স্বীকারোক্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য ছিল বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও কিছু যৌক্তিক দাবি। বাংলাদেশ ফুটবলের এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন, তার বেশিরভাগ কথাই বলা হলো শনিবারের এই আয়োজনে। এখন দেখার বিষয়, কথাগুলো বাস্তবে কতটা রূপ পায়।