“আমি এখন যা করছি এগুলো প্রেসিডেন্টের কাজ নয়”

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৪:৫৮

শেয়ার

“আমি এখন যা করছি এগুলো প্রেসিডেন্টের কাজ নয়”
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: সংগৃহীত।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম প্রথমে ধারণা করেছিলেন, খুব শিগগিরই দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু এখন তিনিই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সরকারের সমর্থনও পাচ্ছেন তিনি। বিসিবি কার্যালয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

 

সভাপতির দায়িত্বে অভিজ্ঞতা কেমন, জানতে চাইলে আমিনুল বলেন, বাইরে থেকে ক্রিকেট দেখার অভিজ্ঞতা আর ভেতরে এসে কাজ করার অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। আগে বিশ্লেষণ করতেন, সমালোচনা করতেন। কিন্তু এখন দায়িত্ব হাতে পেয়ে তিনি একটি চার্টার বানিয়ে কাজ শুরু করেছেন। বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক জায়গায় ধারাবাহিকতা হারিয়ে গেছে। সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

 

বোর্ডের কাঠামো নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেশ কিছু জায়গায় শূন্যতা চোখে পড়েছে। যেমন সঠিক অর্গানোগ্রামের অভাব বা ক্রিকেটের সংস্কৃতি বিস্তারের ঘাটতি। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস জোগানো, নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, এসবের ওপর তিনি জোর দিচ্ছেন। তবে মজার বিষয় হলো, দল হারলে দায় সভাপতির, আর জিতলে কৃতিত্বও সভাপতির, এটা তাকে নতুনভাবে মানিয়ে নিতে হয়েছে।

 

সরকার মনোনীত হয়ে সভাপতি হওয়া কি আইসিসির নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক, এমন প্রশ্নে আমিনুল জানান, বিষয়টি একেবারেই নয়। অনেক দেশেই সরকারের প্রতিনিধি বোর্ডে থাকেন। বাংলাদেশে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এনএসসি থেকে দুজন পরিচালক আসতেই পারেন। পাকিস্তানে তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী সভাপতিকে নিয়োগ দেন। তাই এটি কোনো সমস্যা নয়।

 

সভাপতির পদে আসা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনএসসি প্রথমে তার আগ্রহের কথা জানতে চায়। পরে পরিচালক করা হয়। পরিচালকেরা সম্মতি দিলে সভাপতির দায়িত্বও তার হাতে আসে। এখন তারা কাজ চালিয়ে যেতে বলছে বলেই তিনি নির্বাচনে নামতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 

সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে তামিম ইকবালের নাম শোনা গেলে এ ব্যাপারে আমিনুল বলেন, তামিমকে তিনি ভীষণ সম্মান করেন। তার অবদান খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে অনস্বীকার্য। এটাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভাবেন না তিনি। বরং তার কাছে সবচেয়ে জরুরি হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট ভালো থাকুক।

 

নির্বাচন না করতে ফোন পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে আমিনুল স্বীকার করেন, ফোন এসেছিল। তবে সেটাকে তিনি হুমকি মনে করেননি। বরং সম্মান জানিয়েই বলা হয়েছিল, তিনি যেন নির্বাচন না করার কথা ভেবে দেখেন।

 

সভাপতি না হলে অন্য ভূমিকায় কাজ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাতেও সমস্যা নেই। কারণ, তার লক্ষ্য দেশের ক্রিকেটের জন্য কাজ করা। আইসিসিতে কাজ করার সময়ও তাকে আরও ভালো পদ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। তাই তিনি বিশ্বাস করেন, দায়িত্ব যেখানেই থাকুক না কেন, কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।

 

মাঠপর্যায়ে নেমে কাজ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভাপতির মূল কাজ নীতি নির্ধারণ করা হলেও তিনি “ট্রিপল সেঞ্চুরি প্রোগ্রাম” হাতে নিয়েছেন। এর লক্ষ্য বিসিবিকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা। একবার কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে সভাপতির কাজ সীমাবদ্ধ থাকবে শুধু নীতি আর ভিশনে। এখন তিনি সেই পথ তৈরি করছেন।

 

বিপিএলে ফিক্সিং তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বাধীন তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে। এরপর একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে। তারা অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেবেন। নির্বাচনের আগেই প্রক্রিয়া শেষ করার চেষ্টা চলছে।

 

অভিযুক্তদের খেলতে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা করেন, এখনো চূড়ান্ত প্রমাণ না মেলায় কাউকে সাসপেন্ড করা হয়নি। এতে নির্দোষ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

স্পট ফিক্সিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইসিসিতে কাজ করার সময় থেকেই তিনি জানতেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাই এখন শক্তিশালী দুর্নীতি দমন ইউনিট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অ্যালেক্স মার্শাল এ ব্যাপারে সহায়তা করছেন। একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে প্রধান করে শাস্তি নির্ধারণের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

 

দুদকের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অনিয়ম, সাংগঠনিক কাঠামো আর তৃতীয় বিভাগ বাছাই নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে। এর সমাধান প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে।

 

শেষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করা আর বিসিবি চালানোর মধ্যে কোনটা কঠিন এমন প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে আমিনুল বলেন, দুটোই কঠিন। তবে বোর্ড চালাতে হলে অনেক ভালো সহযোগী দরকার। অভিষেক টেস্টে যেমন রানার পেয়েছিলেন, বোর্ডেও তেমন সহযোগিতা প্রয়োজন।