.jpg)
এশিয়া কাপের যাত্রার সূচনাটা ভালই হল বাংলাদেশের। হংকং-এর দেওয়া ১৪৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় লিটনের ৫৯ এবং তাওহীদ হৃদয়ের অপরাজিত ৩৫ রানে চড়ে ১৪ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে রান তোলাটা সহজ ছিল না। অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপরিসম বাউন্স, মাটি কামড়ে আসা বল, স্লোয়ার এসব মোকাবেলা করে, টাইগারদের যে লক্ষ্য ছিল রান রেটে এগিয়ে থাকতে দ্রুত রান তুলে ম্যাচ শেষ করা সেটা হয়নি। লো-স্কোরিং বা মাঝামাঝি টার্গেটে রান তুলতে ইদানিং বেশিরভাগ কাজটাই সেরে ফেলেন দুই ওপেনার তানজিদ তামিম এবং পারভেজ ইমন। তবে এদিনের চিত্রনাট্য ছিল ভিন্ন।
যদিও শুরুতে দুটো চার এবং একটি ছক্কা হাঁকিয়ে ভালই এগুচ্ছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। ম্যাচের শুরুতে তার ব্যাটিং গড় নিয়ে সমালোচনাও করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বড় ছক্কা মারতে গিয়ে এক হাত ছুটে গেলে এক হাতে খেলা শটে বল আকাশে চলে যায়। শটটা বেশ জোরেই মেরেছিলেন ইমন। হাত ছুটে না গেলে এটা হয়তো গ্যালারিতে গিয়ে পড়ত। কিন্তু সেই বল তালুবন্দী করেন বাবর হায়াত। ১৪ বলে ১৯ রান করে আয়ুশ শুক্লার বলে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন।
পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার আগে ফেরেন তানজিদ তামিমও। ১৮ বল খেলে মাত্র ১টি বাউন্ডারি বের করতে পেরেছেন তিনি। ১৪ রান করে অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে টাইমিং ভুল করেন তামিম। নিজাকাত খান মিড অফ থেকে দৌড়ে এসে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন। পাওয়ারপ্লেতে ২ ওপেনারকে হারিয়ে ৫১ রান তোলে বাংলাদেশ।
এরপরের গল্পটা লিটন-হৃদয়ের। যদিও তাদের বেশকিছু শট ব্যাটেই লাগেনি। আবার ধুমধাড়াক্কা ব্যাট চালিয়ে ছক্কাও বের করা যাচ্ছিল না। তবুও হাল না ছেড়ে সিঙ্গেল, ডাবলস নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন দাস এবং তাওহীদ হৃদয়।
১৩ ওভারে ১০০ ছোঁয় বাংলাদেশ। এরপরই হাত চালিয়ে খেলা শুরু করেন ক্যাপ্টেন লিটন দাস। যদিও সুবিধা করতে পারছিলেন না হৃদয়। তবে উইকেট না বিলিয়ে ধরে খেলার মানসিকতাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমনটা ম্যাচের আগেই বলেছিলেন লিটন দাস,” শুধু ছক্কা দিয়ে কাজ হবে না, আমাদের স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে।” সেটারই বাস্তবায়ন দেখা গেল এই ম্যাচে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৫ রান তোলেন তাওহীদ হৃদয় এবং লিটন দাস। ধরে না খেলে ধৈর্য্য হারালে আরও উইকেট হারানোর সম্ভাবনা থাকতো।
তবে আবুধাবির এই গরমে স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অতিষ্ঠ হয়েছেন দুই টাইগার ব্যাটার। দৌড়ে রান নিতে নিতে লিটন যে হারে ঘামছিলেন তাতে ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন, “এখন লিটনের একটি চমৎকার গোসল দরকার!”। ১৬তম ওভারে এসে প্রথম ছক্কা হাঁকান লিটন দাস। এরপর দুই রান নিয়ে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৬তম অর্ধশতক।
কিন্তু ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি লিটন। ক্রস ব্যাটে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আতিক ইকবালের নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন। জয় থেকে তখন বাংলাদেশ মাত্র ২ রান দূরে। তাই খানিকটা রাগান্বিতও দেখা গেল ডাগ-আউটে ফেরার সময়। এই গরমে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ম্যাচ প্রায় নিশ্চিত করে যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, হংকংয়ের প্লেয়াররা তাকে পিঠ চাপড়ে-হ্যান্ডশেক করে অভিবাদন জানান। ১৫১ স্ট্রাইক রেটে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করার পথে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটাও নিজের করে নেন লিটন দাস।
৩৬ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৩৫ রানের পরিশ্রমী ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তাওহীদ হৃদয়। এতে ১৪ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
হংকং বোলারদের মধ্যে আতিক ইকবাল মাত্র ১৪ রান দিয়ে দুটি এবং আয়ুশ শুক্লা ১টি উইকেট শিকার করেন।
ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণীর ফাঁকে শ্রীলংকার সাবেক ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার রাসেল আর্নল্ড বলছিলেন যে এই গ্রুপে লড়াইটা সমানে সমান হওয়ার কারণে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকতে বাংলাদেশের আরও দ্রুত রান তোলা উচিৎ ছিল। তবে পুরস্কার বিতরণীর সময় লিটন বলছিলেন এই উইকেটে রান তোলা সহজ নয়, তাছাড়া লম্বা বাউন্ডারির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ৫৯ রানের ইনিংস তাকে আজকেও ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে।
টাইগারদের পরবর্তী ম্যাচ আগামী শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এশিয়া কাপ জয়ের মিশনে প্রতিটি ম্যাচ জয়ের বিকল্প নেই টাইগারবাহিনীর। তবে শ্রীলঙ্কাও ছেড়ে কথা বলবে না। তাই নাগিন ডান্স-টাইম আউটের পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ে জমজমাট খেলার অপেক্ষায় থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আরও পড়ুন: