বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষার ম্যাচ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:১২

আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০২:০০

শেয়ার

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত পরীক্ষা-নীরিক্ষার ম্যাচ
বৃষ্টি না থামায় ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়ারগণ। ছবি: সংগৃহীত।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই সিরিজটা ছিল এশিয়া কাপের আগে নিজেদের ঝালাই করে নেওয়ার মঞ্চ। সেজন্য এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজের আগে বাংলাদেশ দলে চালানো হয় রোলারকোস্টারের মত পরীক্ষা-নীরিক্ষা। ঘটা করে আয়োজন করে হয় ফিটনেস ক্যাম্প, অল্প সময়ের জন্য উড়িয়ে আনা হয় পাওয়ার হিটিং কোচ, টপ এন্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে ‘এ’ দল থেকে চূড়ান্ত স্কোয়াডে সাইফ-সোহানের জায়গা করে নেওয়া সব মিলিয়ে উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলায় আমূল পরিবর্তন আনা।

 

কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে সেই পরীক্ষা-নীরিক্ষার বাস্তবায়নের চেয়ে উলটো সহজ জয় তুলে নেওয়াই যেন মূল উদ্দেশ্য ছিল লিটন-তাসকিন-মুস্তাফিজদের। এজন্য হয়েছে ব্যপক সমালোচনাও। দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে তাই আজ (৩ সেপ্টেম্বর) শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ৫ পরিবর্তন নিয়ে নেমেছে সেই ‘ঝালাই করে নেওয়া’র লক্ষ্যে। বৃষ্টির কারণে শেষমেশ ১৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ করে বাংলাদেশের ইনিংস থামে। ভেজা মাঠে নেদারল্যান্ডসেরও আর নামা হয়নি ব্যাটিংয়ে। ফলে পরিত্যক্ত হয় ম্যাচ।

 

আগের দুই ম্যাচ ৮ উইকেট ও ৯ উইকেটে জিতে যাওয়ায় দর্শকদের মনে জাকের-হৃদয়-রিশাদদের পাওয়ার হিটিংয়ের প্রদর্শনী মিসের ক্ষোভ ছিল। তাই আজ দুই ওপেনার তামিম-ইমনকে ছাড়াই নেমেছে বাংলাদেশ। ‘মাল্টিপল রোলে’ কেমন খেলেন সাইফ হাসান তা দেখার জন্য লিটনের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল তাকে, যদিও লিটনের জন্য টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিং নতুন কিছু নয়। তবে নতুন বল মোকাবেলা করার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ছেন সাইফ, একবার জীবন পেয়েও ৮ বলে ১২ রান করে ক্লেইনের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে যান এই অলরাউন্ডার। 

 

তবে অপর প্রান্তে লিটনের বেধড়ক পিটুনিতে রানের চাকা রকেটের গতিতে এগুতে থাকে। তৃতীয় ওভারে ডাচ বাঁহাতি স্পিনার ড্যানিয়েল ডোরামের ওপর চড়াও হয়ে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২২ রান আদায় করে নেন। মাত্র ৩.৪ ওভারেই ৫০ পেরোয় বাংলাদেশ। কিন্তু তখনই ফ্লাডলাইট ত্রুটিতে আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ থাকে মিনিট পাঁচেক। খেলা শুরু হওয়ার পরপরই ফ্রি হিটে বাউন্ডারি হাঁকান লিটন। এরপরের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন শারিজ আহমেদ। পুরো ইনিংসে ডাচ ফিল্ডারদের সৌজন্যে তিনবার ‘জীবন’ পেয়েছেন লিটন। ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান ওঠে ১ উইকেট হারিয়ে ৫৬। খেলার এ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর ২০০ পেরোবে এটাই ছিল সবার প্রত্যাশা। কিন্তু ৪.২ ওভারে বাদ সাধে বৃষ্টি। 

 

আধা ঘন্টার কিছুপর বৃষ্টি থামলে ১ উইকেটে ৬১ রান নিয়ে পুনরায় খেলা শুরু করে লিটন দাস ও তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু বৃষ্টির পর বাংলাদেশের রানের চাকা থমকে যায়। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত আড়াইশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে লিটনের রান ছিল ১৩ বলে ৪২। সেখান থেকে গতি টেনে ধরেন ডাচ বোলাররা। পাওয়ার-প্লে তে ৬৭ রান তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টাইগার ব্যাটারদের। 

 

আগের ২ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ না পেয়ে তাওহীদ হৃদয় আজ অযথা একের পর এক ডট বল খেলে ১৪ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই মাত্র ৯ রান করে টিম প্রিঙ্গেলের বল আকাশে তুলে দিয়ে বিদায় হন। ৭৭ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের। 

 

বেশকিছুক্ষণ রান নিতে বেগ পেতে হয়েছে লিটনেরও। ড্যানিয়েল ডোরামের বল পেয়েই ছক্কা হাঁকিয়ে  লিটন তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি তুলে নিয়ে সাকিবকে টপকে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ড নিজের করে নেন। 

 

লিটন দাস যেখানে আড়াইশোর বেশি স্ট্রাইক রেটে খেলছিলেন সেখান থেকে তার স্ট্রাইক রেট দেড়শোতে নামিয়ে আনেন ডাচ বোলাররা। বৃষ্টির পর আউটফিল্ড কিছুটা মন্থর গতির হয়ে যাওয়ায় স্লগিং ছাড়া রান বের করা কষ্ট ছিল বুঝেই মাটি কামড়ানো বল করছিলেন টিম প্রিঙ্গেল-আরিয়ান দত্তরা। ব্যাটের অনেক নিচ দিয়ে যাওয়া একের পর বল খেলতে খেলতে হতাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত ক্লেইনের বলে ক্যাচ ম্যাক্স ও’ডাউডের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন। তবে যাবার আগে ৪৬ বলে খেলেছেন ৭৩ রানের বড় ইনিংস। ১৫৮.৬৯ স্ট্রাইক রেটের সেই ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও চারটি ছয়ের মার। 

 

লিটনের বিদায়ের পর পাঁচ নম্বরে আসেন জাকের আলী। পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র প্রো ভেলোসিটি ব্যাটে যেই নিখুঁত শটের আওয়াজের কথা বলছিলেন সেই আওয়াজ দিয়েই ছক্কা মেরে দেখিয়েছেন তার শটের নির্ভুলতা। চারে নামা শামীম পাটোয়ারীকে দারূন এক বাউন্সারে পরাস্ত করেন ক্লেইন। ১৯ বলে মাত্র ১ বাউন্ডারিতে ২১ রান করেছেন শামীম। 

 

১ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটার প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন নুরুল হাসান সোহান। পঞ্চম উইকেটে জাকেরকে সাথে নিয়ে সোহান গড়েন ৪২ রানের জুটি। দু’জন যখন কেবল হাত চালিয়ে খেলা শুরু করেছেন তখনই আবার প্রকৃতির কাছে হার মানে মানুষ। ১৮.২ ওভারে বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভেজা আউটফিল্ডের কারণে বাংলাদেশের ইনিংসের সেখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে। আর নির্ধারিত সময়ে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস শুরু করতে না পারায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। 

 

২ ছক্কায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ১১ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন সোহান। আর ১৩ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন জাকের আলী অনিক। ১৮.২ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রান তোলে বাংলাদেশ। 

 

বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ব্যাট-বল কিছুই করতে পারেননি। এছাড়া দলের মূল বোলার মুস্তাফিজুর রহমান-তাসকিন আহমেদদের বিশ্রাম দিয়ে বাকিরা কি করেন সেটারও প্রদর্শনী হল না আজ। পুরো সিরিজজুড়েই যে পরীক্ষা-নীরিক্ষার কথা বলা হচ্ছিল আজ তার খুব সামান্যটাই দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই অনেক প্লেয়ারকে নিয়েই বিশেষ করে মিডল অর্ডার ব্যাটিং লাইন-আপ কিরকম হতে পারে, কার কি ভূমিকা থাকতে পারে এসব যাচাইটা হল না এশিয়া কাপের আগে। 

 

বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ডাচদের হোয়াইটওয়াশ করা হলোনা টাইগারদের। ২-০ তে সিরিজ জিতে টানা তৃতীয় সিরিজ জিতে নিল টাইগারবাহিনী। তিন ম্যাচে দুই অর্ধশতকে ১৪৫ রান করে সিরিজসেরা হয়েছেন ক্যাপ্টেন লিটন দাস।