শিরোনাম

২৮ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।
এশিয়া কাপের প্রস্তুতির মঞ্চ’ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের রানের ১৩৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ডাচবাহিনী। পড়ন্ত বিকেলের মায়াবী আলোয় ঘেরা সারি সারি টিলার মাঝে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ডাচদের আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান টাইগার কাপ্তান লিটন কুমার দাস। তাসকিন আহমেদের ৪ উইকেট, দীর্ঘদিন পর দলে সুযোগ পাওয়া সাইফ হাসান ও মুস্তাফিজদের মাপা বোলিংয়ের সামনে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলতে সমর্থ হয় নেদারল্যান্ডস।
সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে নতুন বল হাতে তুলে নেন শেখ মাহেদী হাসান, প্রথম ওভার থেকেই ডাচদের নিয়ন্ত্রণে রাখে টাইগার বোলাররা। স্টাম্প টু স্টাম্প বোলিংয়ে মাত্র তিনটি সিঙ্গেল আসে সেই ওভার থেকে। দ্বিতীয় ওভার থেকে পেস আক্রমণ শুরু করে টাইগার শিবির। তিন বাউন্ডারি হজম করেন শরীফুল ইসলাম। দুজনই নিজেদের দ্বিতীয় ওভারে ছিলেন বিপরীত। শরীফুল দারুণ সুইংয়ে মেডেন ওভার আদায় করে নিয়েছেন আর ১ ছক্কায় ৯ রান দিয়েছেন শেখ মাহেদী।
চতুর্থ ওভারে বল হাতে তুলে নেন বাংলাদেশের একমাত্র ‘এ প্লাস’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ। প্রথম বলেই নামের সুবিচার করে ডাচ শিবিরে প্রথম তোপ দাগেন তাসকিন। তার গুড লেন্থ ডেলিভারিতে শর্ট কভারে জাকের আলীর হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ওপেনার ম্যাক্স ও’দোদ। ১৫ বল খেলে ৩ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৩ রান করেন তিনি। টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লে-তে ১ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৪ রান তুলতে সমর্থ হয় স্কট এডওয়ার্ডসের দল।
অষ্টম ওভারে আবারও আঘাত হানেন তাসকিন। এবার লং অফে ইমনের হাতে ধরা পড়েন আরেক ওপেনার বিক্রমজিত সিং। ব্যাট হাতে ধুঁকতে থাকা এই ওপেনার ১১ বল খেলে করেছেন মোটে চার রান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে কিছুক্ষণ বোলারদের শাসন করেন টেজা নিদামানুরু এবং অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। তাদের ২৮ রানের ছোট জুটিতে খানিকটা স্বস্তি ফিরে পায় ডাচশিবির।
কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরা সাইফ হাসান। অস্ট্রেলিয়ায় টপ এন্ড টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত পারফর্ম করে দলে জায়গা করে প্রথম ম্যাচের একাদশেই সুযোগ করে নিয়েছেন সাইফ। নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দেন সাইফ প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে। ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস সাইফের অফস্পিনে পরাস্ত হয়ে এক হাতে সুইপ শট খেলেন। অনেকটা দৌড়ে এসে লাফিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নিয়ে গর্জনের উল্লাস করেন জাকের আলী। সেই সাথে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক উইকেট তুলে নেন সাইফ। ৭ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১২ রান করেন স্কট। ওভারের শেষ বলে এই জুটির আরেক ব্যাটার নিদামানুরুকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান সাইফ। ডিপ মিড উইকেটে তাওহীদ হৃদয়ের বিশ্বস্ত হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় হন ২৬ বলে ২৬ রান করা নিদামানুরু।
দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়া নেদারল্যানডস শিবিরে পঞ্চম আঘাত হানেন অভিজ্ঞ মুস্তাফিজ। ১৪ বলে ১৫ রান করে বলের আগামাথা না বুঝতে পেরে আকাশে তুলে দেন ডাচ ব্যাটার শারিজ আহমেদ। সহজ ক্যাচ ছাড়েননি জাকের। প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৮ রান তোলে ডাচরা।
রিশাদ-শরীফুলদের কাছ থেকে বাউন্ডারি বের করতে পারলেও এদিন ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ ছিল দুর্দান্ত। তাই সাতের নিচে রানরেটে ধুঁকছছিল নেদারল্যান্ডস। ১৬তম ওভারে এসে দলীয় সংগ্রহ ১০০ রান পেরোয় ডাচদের।
১০০ ছুঁয়েই আবারো তাসকিন আঘাতে পর্যুদস্ত নেদারল্যান্ডস। প্রথম তিন বলে চাপ সৃষ্টি করে হঠাৎই বলের গতি কমিয়ে ১০৯ কিলোমিটার/ঘন্টায় বল ছোড়েন তাসকিন। তাতেই ঘায়েল হল কাইল ক্লেইন। ডট বলে চাপে থাকা ক্লেইন বল আকাশে তুলে দিলে, ইমন-হৃদয় ‘আমি নেব না আমি নেব’ করে শেষ পর্যন্ত হৃদয়ই লুফে নেন। ১৮তম ওভারে নোয়াহ ক্রোয়েসকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন তাসকিন। এটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার তৃতীয় 'ফোরফার'।
অষ্টম উইকেট জুটিতে ২৬ রান তুলে দলকে মান বাঁচানো সংগ্রহ এনে দেন টিম প্রিঙ্গেল এবং আরিয়ান দত্ত। প্রিঙ্গেল ১৪ বলে ১৬ রান করে শেষ বলে রান আউট হলে ৮ উইকেটে ১৩৬ রানে থামে ডাচদের ইনিংস।
টাইগার বোলারদের মধ্যে এদিন সমচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তাসকিন আহমেদ। তার ৪ ওভারের স্পেলে সর্বোচ্চ ১৩টি ডট বল দিয়ে ২৮ রান খরচায় তুলে নিয়েছেন ৪ টি উইকেট। সাইফ হাসান তুলনামূলক খরুচে বোলিংয়ে ২ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। আর ১১টি ডট বল দিয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নিয়েছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। শেখ মাহেদী ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান দিলেও কোনো উইকেট নিতে পারেননি।
আরও পড়ুন: